মাদারীপুরে বেপোরোয়া কিশোর গ্যাং, রাজনৈতিক সুবিধায় আধিপত্য!
প্রকাশ: শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১২:১২ পিএম  (ভিজিট : )
সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

তাজাখবর২৪.কম,মাদারীপুর: মাদারীপুরে শহর থেকে গ্রাম, সব জায়গাতেই কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। প্রায়ই সংঘর্ষে জড়াচ্ছে তারা।আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন যেমন আছে, তেমনই তার কার্যকর প্রয়োগও জরুরি। তা না হলে এই কিশোর গ্যাংকে দ্রুত দমন করা সম্ভব নয়।

এদিকে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের অপরাধ দমনে পুলিশের একার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়; সামাজিক আন্দোলনই হতে পারে সবচেয়ে বড় কার্যকর শক্তি।সম্প্রতি কিশোর গ্যাংয়ের হামলার শিকার হন বাউল শিল্পী সজল বেপারী। ঘটনার পর তাকে ভর্তি করা হয় মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে। জানা গেছে, ঘটনার দিন, শহরের পানিছত্র এলাকায় হঠাৎ ঘিরে ফেলে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হাত-পা সহ শরীরের একাধিক স্থানে কুপিয়ে জখম করে তারা।
 
চিকিৎসাধীন সজল বেপারী বলেন, ‘ব্যক্তিগত কাজ শেষে রাস্তায় দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন কিশোর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। শরীরের একাধিক স্থানে কুপিয়ে জখম করে। আমি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছি। হামলাকারীদের বয়স ১৩ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। এই ঘটনার আমরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
  
শুধু এই বাউল শিল্পীই নন-এমন অসংখ্য হামলা ও সংঘর্ষের দৃশ্য প্রতিনিয়তই ছড়িয়ে পড়ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সিসিটিভি ফুটেজ বা প্রত্যক্ষদর্শীদের মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওতে প্রকাশ পাচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের বেপরোয়া দৌরাত্ম্য। জেলা শহর ছাড়িয়ে এখন গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে তাদের আধিপত্য। রাজনৈতিক সুবিধা নেয়া এবং স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারের আড়ালে ১২-১৬ বছর বয়সী কিশোররা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে এবং হামলা চালাচ্ছে।
 
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহরের বাদামতলা, ইউআই স্কুল রোড, আমিরাবাদ, বটতলা, কলেজ রোডসহ অন্তত এক ডজন জায়গায় প্রায়ই কিশোর গ্যাংয়ের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় তারা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত সর্বসাধারণ। বারবার হামলা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর হলেও মামলা করা হয় না, ফলে মূল অভিযুক্তরা সহজেই থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
 
পরিসংখ্যান বলছে, গত এক বছরে কিশোর গ্যাংয়ের অন্তত ৩০টি সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। বেশ কয়েকবার পুলিশ অভিযান চালিয়ে কিছু কিশোরকে আটক করলেও মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়ার কারণে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে তারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বল অবস্থানের সুযোগে এখন শহরের বিভিন্ন এলাকায় আতঙ্ক বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
  
ইউআই স্কুলের সামনে কনফেকশনারীর ব্যবসায়ী ইফতেখারুর রহমান লিটন বলেন, ‘কলেজ রোড ও আমিরাবাদ এলাকার কিশোর গ্যাং সদস্যরা প্রায়ই সংঘর্ষে জড়ায়। সংঘর্ষ শুরু হলেই আশপাশের দোকানপাটে হামলা চালায়। আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও কয়েকবার হামলা হয়েছে। পুলিশ আসে সবকিছু শেষ হওয়ার পর।’
 
বাদামতলা এলাকার মোবাইল ব্যবসায়ী নাসির হোসেন বলেন, ‘১৫-১৬ বছরের কিশোরেরা হামলা ও সংঘর্ষ চালিয়ে যাচ্ছে অব্যাহতভাবে। প্রশাসনের তেমন সক্রিয়তা দেখছি না। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ইট-পাটকেল ছোড়ে, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। পরে ভয়ে দোকান বন্ধ করে ভিতরে থাকতে হয়। আমরা স্থায়ী প্রতিকার চাই।’আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন প্রয়োগে গাফিলতি ও তদন্তের দুর্বলতার সুযোগেই কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। তাদের মতে, আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে খুব দ্রুতই কিশোর গ্যাং নির্মূল করা সম্ভব।
  
মাদারীপুর আদালতের আইনজীবী ও জেলা আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন আরমিন মোল্লা বলেন, ‘আইন থাকলেও তার সঠিক প্রয়োগ নেই। কিশোর গ্যাং খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু বারবার হামলা-সংঘর্ষ হলেও মামলা হয় না, আইনের প্রয়োগও হয় না। মামলা করে কিশোরদের আইনের আওতায় আনা গেলে ‘কিশোর গ্যাং’ শব্দটাই হারিয়ে যেত। অপরাধ কমাতে আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার।’
 
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের দুই পক্ষের সংঘর্ষ এখন জেলার নিয়মিত ঘটনা। এটা মাদারীপুর জেলার ঐতিহ্য হয়ে গেছে। পুলিশকে প্রায়ই তাদের মারামারি থামাতে ব্যস্ত থাকতে হয়। বড় সমস্যা হলো-ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা মামলা করতে চান না। ফলে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা কঠিন হয়ে পড়ে। এই অপরাধ থামাতে সামাজিক আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই। পরিবার, জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদদেরও এগিয়ে আসতে হবে।’

তাজাখবর২৪.কম,ঢাকা: শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৭শে অগ্রহায়ণ ১৪৩২,২০ জুমাদাস সানী, ১৪৪৭

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »






সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সম্পাদক: কায়সার হাসান
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: এ্যাডভোকেট শাহিদা রহমান রিংকু, সহকারি সম্পাদক: জহির হাসান,নগর সম্পাদক: তাজুল ইসলাম।
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়: মডার্ণ ম্যানশন (১৫ তলা) ৫৩ মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০।
ফোন: ০৮৮-০২-৫৭১৬০৭২০, মোবাইল: ০১৭৫৫৩৭৬১৭৮,০১৮১৮১২০৯০৮, ই-মেইল: [email protected], [email protected]
সম্পাদক: কায়সার হাসান
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: এ্যাডভোকেট শাহিদা রহমান রিংকু, সহকারি সম্পাদক: জহির হাসান,নগর সম্পাদক: তাজুল ইসলাম।
বার্তা ও বাণিজ্যক কার্যালয়: মডার্ণ ম্যানশন (১৫ তলা) ৫৩ মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০।
ফোন: ০৮৮-০২-৫৭১৬০৭২০, মোবাইল: ০১৭৫৫৩৭৬১৭৮,০১৮১৮১২০৯০৮, ই-মেইল: [email protected], [email protected]
🔝