প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৫, ১০:০৬ এএম (ভিজিট : )
সংগৃহীত ছবি
তাজাখবর২৪.কম,আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজায় স্থিতিশীলতা রক্ষায় আন্তর্জাতিক বাহিনী মোতায়েনসহ যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ২০ দফা পরিকল্পনা সমর্থন দিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।নিরাপত্তা পরিষদের ১৩টি সদস্য দেশ এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। তবে, গাজার শাসকদল হামাস এই প্রস্তাবকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে।নিরাপত্তা পরিষদের ভোটাভুটিতে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও সোমালিয়াসহ ১৩টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেয়। কোনও দেশ বিরোধিতা করেনি। তবে রাশিয়া ও চীন ভোটদানে বিরত থাকে।
প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এটি ফিলিস্তিনিদের অধিকারের দাবি পূরণ করে না। পরিকল্পনাটি গাজায় ‘আন্তর্জাতিক অভিভাবকত্ব চাপিয়ে দিচ্ছে’, যা ফিলিস্তিনি জনগণ ও তাদের বিভিন্ন গোষ্ঠী মানতে রাজি নয়।খসড়া অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনীর (আইএসএফ) একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হবে হামাসসহ ‘অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অস্ত্র স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় করা’। পাশাপাশি বেসামরিক মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং মানবিক সহায়তার রুটগুলো নিরাপদ রাখা।
এছাড়া আইএসএফ ইসরায়েল ও মিসরের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে। একইসঙ্গে গাজায় নতুন করে প্রশিক্ষিত একটি ফিলিস্তিনি পুলিশ গঠনের কথাও বলা হয়েছে। যদিও এতদিন পুলিশ বাহিনী হামাসের আওতাধীন ছিল।জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজ বলেন, আইএসএফ’র কাজ হবে- এলাকা সুরক্ষিত রাখা, গাজাকে সামরিকীকরণমুক্ত করা, সন্ত্রাসী অবকাঠামো ভেঙে ফেলা, অস্ত্র অপসারণ এবং ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
সম্প্রতি হোয়াইট হাউসের প্রকাশিত ২০ পরিকল্পনা হলো-
১. গাজাকে সম্পূর্ণরূপে চরমপন্থা ও সন্ত্রাসমুক্ত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হবে, যাতে এর প্রতিবেশীদের জন্য কোনো হুমকি না থাকে।
২. দীর্ঘদিন ধরে ভোগান্তিতে থাকা গাজার মানুষের কল্যাণে অঞ্চলটির পুনর্গঠন করা হবে।
৩. এই প্রস্তাবে উভয়পক্ষ সম্মত হলে যুদ্ধ অবিলম্বে বন্ধ হবে। ইসরাইলি বাহিনী নির্ধারিত সীমারেখায় সরে যাবে এবং জিম্মি মুক্তির প্রস্তুতি নেবে। এ সময়ে সব সামরিক অভিযান, বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ বন্ধ থাকবে এবং পূর্ণ প্রত্যাহারের শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধরেখা অপরিবর্তিত থাকবে।
৪. ইসরাইল এই চুক্তি প্রকাশ্যে গ্রহণ করার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জীবিত ও মৃত সকল জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
৫. সকল জিম্মি মুক্তি পেলে ইসরাইল ২৫০ জন যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীসহ ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর আটক ১ হাজার ৭০০ জন গাজাবাসীকে মুক্তি দেবে, যার মধ্যে নারী ও শিশুরাও থাকবে। প্রত্যেক ইসরাইলি জিম্মির দেহাবশেষ ফেরতের বিনিময়ে ১৫ জন মৃত গাজাবাসীর দেহাবশেষ হস্তান্তর করা হবে।
৬. জিম্মি মুক্তির পর যেসকল হামাস সদস্যরা অস্ত্র জমা দিয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে রাজি হবে তাদের সাধারণ ক্ষমা দেওয়া হবে। পাশাপাশি যে সকল হামাস সদস্য গাজা ছাড়তে চায়, তাদের নিরাপদে অন্য দেশে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
৭. চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই গাজায় পুরোদমে মানবিক সহায়তা পাঠানো হবে। ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারির চুক্তি অনুযায়ী অবকাঠামো, পানি, বিদ্যুৎ, পয়ঃনিষ্কাশন, হাসপাতাল ও বেকারিগুলোর পুনর্গঠন এবং ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে রাস্তা খোলার কাজও চলবে।
৮. জাতিসংঘ, রেড ক্রিসেন্ট ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে ত্রাণ প্রবেশ ও বিতরণে উভয়পক্ষ হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। ২৫ জানুয়ারি, ২০২৫-এর চুক্তি অনুযায়ী, রাফা ক্রসিংয়ের উভয় মুখ আগের চুক্তির মতোই খোলা থাকবে।
৯. গাজা অস্থায়ী আপদকালীন ভাবে একটি টেকনোক্র্যাট ও অরাজনৈতিক ফিলিস্তিনি কমিটির অধীনে পরিচালিত হবে, যারা দৈনন্দিন জনসেবা দেখবে ও পৌরসভা পরিচালনা করবে। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণে গঠিত এই কমিটির ওপর নজরদারি করবে নতুন আন্তর্জাতিক অন্তর্বর্তীকালীন সংস্থা ‘বোর্ড অব পিস’। এর চেয়ারম্যান থাকবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, আর সদস্যদের মধ্যে থাকবেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ আরও কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধান। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) ট্রাম্পের ২০২০ সালের শান্তি পরিকল্পনা এবং সৌদি-ফরাসি প্রস্তাবসহ বিভিন্ন সংস্কার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কার্যকরভাবে গাজার নিয়ন্ত্রণ না নেওয়া পর্যন্ত এই সংস্থা গাজার পুনর্গঠনের অর্থায়ন ও কাঠামো দেখবে।পাশাপাশি এই সংস্থা আন্তর্জাতিক মান অনুসারে আধুনিক ও কার্যকর প্রশাসন তৈরি করবে। যা গাজার জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকবে এবং বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে সহায়ক হবে।
১০. গাজা পুনর্গঠনের জন্য একটি ‘ট্রাম্প অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা’ প্রণয়ন করা হবে। মধ্যপ্রাচ্যে আধুনিক শহর গঠনে সাহায্যকারী অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি প্যানেল গঠন করা হবে। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করে কর্মসংস্থান, সুযোগ ও আশা সৃষ্টিই হবে এর লক্ষ্য।
১১. অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক শুল্ক ও প্রবেশাধিকার হার নিয়ে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হবে।
১২. কাউকে গাজা ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হবে না এবং যারা যেতে চায় তারা স্বাধীনভাবে যেতে ও ফিরে আসতে পারবে। মানুষকে থেকে যেতে উৎসাহিত করা হবে এবং তাদের জন্য একটি উন্নত গাজা গড়ার সুযোগ দেওয়া হবে।
১৩. হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠী গাজার প্রশাসনে কোনোভাবেই ভূমিকা রাখবে না। সব সামরিক অবকাঠামো, টানেল ও অস্ত্র কারখানা ধ্বংস করা হবে এবং পুনর্নির্মাণ নিষিদ্ধ থাকবে। স্বাধীন পর্যবেক্ষকদের তত্ত্বাবধানে সেখানে নিরস্ত্রীকরণের প্রক্রিয়া চলবে। অস্ত্র নিষ্ক্রিয়করণ ও সদস্যদের পুনর্বাসনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে অর্থায়ন করা হবে।নতুন গাজা সমৃদ্ধ অর্থনীতি গড়ে তোলার পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে শান্তিতে বসবাসের জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকবে।
১৪. আঞ্চলিক অংশীদাররা নিশ্চিত করবে যে হামাস এবং অন্যান্য গোষ্ঠী তাদের বাধ্যবাধকতা মেনে চলবে এবং নতুন গাজার প্রতিবেশী বা এর জনগণের জন্য কোনো হুমকি সৃষ্টি করবে না।
১৫. আরব ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে মিলে যুক্তরাষ্ট্র একটি অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ) গঠন করবে। এটি দ্রুত গাজায় মোতায়েন হয়ে বাছাই করা ফিলিস্তিনি পুলিশকে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দেবে। জর্ডান ও মিসরের অভিজ্ঞতাও এতে কাজে লাগানো হবে। এই বাহিনী দীর্ঘমেয়াদে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে এবং ইসরাইল-মিসরের সঙ্গে সীমান্ত সুরক্ষায় কাজ করবে।
১৬. ইসরাইল গাজা দখল বা সংযুক্ত করবে না। আইএসএফ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলে ইসরাইল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) ধাপে ধাপে গাজা ছাড়বে। নিরস্ত্রীকরণের অগ্রগতির ভিত্তিতে আইডিএফ দখলকৃত এলাকা আইএসএফ-এর হাতে তুলে দেবে। সম্পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত একটি সীমিত নিরাপত্তা বেষ্টনী বজায় থাকবে।
১৭. হামাস প্রস্তাবটি বিলম্বিত বা প্রত্যাখ্যান করলে, নির্ধারিত ত্রাণ কার্যক্রমসহ ওপরের সব পদক্ষেপ আইডিএফ থেকে আইএসএফ-এর হাতে হস্তান্তরিত সন্ত্রাসমুক্ত এলাকায় বাস্তবায়িত হবে।
১৮. সহনশীলতা ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তিতে একটি আন্তঃধর্মীয় সংলাপ চালু করা হবে, যাতে ফিলিস্তিনি ও ইসরাইলিদের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতা পরিবর্তন হয়। এর মাধ্যমে যে শান্তি পাওয়া যাবে তার সুফলের ওপর জোর দেওয়া হবে।
১৯. গাজা পুনর্গঠন এগিয়ে গেলে এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে, ফিলিস্তিনিদের স্ব-নিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য একটি বাস্তবসম্মত পথ তৈরি হবে, যা ফিলিস্তিনিদের দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা।
২০. যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সহাবস্থানের রাজনৈতিক দিগন্ত নির্ধারণে সংলাপ শুরু করবে।
তাজাখবর২৪.কম,ঢাকা: মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩২,২৫ জুমাদাল উলা, ১৪৪৭