মোহাম্মদ খোরশেদ হেলালী,তাজাখবর২৪.কম,কক্সবাজার: কক্সবাজারের রামুতে মহাসড়কে গরুর গাড়ি দাঁড় করিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাশেদুল ইসলাম ও গর্জনিয়া বাজারের ইজারাদার কে এম রহিম উদ্দিনের নামে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে একটি সংজ্ঞবদ্ধ গ্রুপ। রশিদ নগর ইউনিয়নের নাদেরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে গরু প্রতি ৩ শত টাকা আদায় করছে গ্রুপটি। ইউএনও’র নির্দেশেই টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে প্রতিবেদককে জানান দায়িত্বপ্রাপ্ত গ্রুপের সদস্যরা। তথ্যসূত্রে জানা যায়, সীমান্ত হয়ে প্রতিদিন গাড়ি যোগে হাজারের অধিক গরু পাচার হয় এ সড়ক দিয়ে, সে হিসেবে একদিনে ৩ লক্ষ টাকা এবং মাসে প্রায় কোটি টাকা চাঁদা আদায় করার হিসেব মিলছে।
স্থানীয়রা জানান, রশিদ নগর ইউনিয়নের কাহাতিয়া পাড়া ও ধলিরছড়া এলাকার দুর্ধর্ষ ডাকাত ও দাগি সন্ত্রাসীরা সংজ্ঞবদ্ধ হয়ে গরুর গাড়ি আটকিয়ে অর্থ আদায় করছে। রামুর ইউএনওই তাদেরকে দাঁড় করিয়েছে বলে তারা প্রকাশ্যে স্বীকারোক্তি দিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে রামুর সচেতন মহলের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও উপজেলা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এদিকে এরকম অসঙ্গতিপূর্ণ ঘটনার অবতারণা হওয়ার পরও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সুনির্দিষ্ট কোন প্রদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না।
সরজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রামু রশিদ নগর নাদেরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে গরুর গাড়ি আটকিয়ে প্রকাশে চাঁদা নিচ্ছে ৮-১০ জনের একটি গ্রুপ। পাশাপাশি সড়কের দু পাশে লাটি হাতে বিক্ষিপ্তভাবে তাদের গ্রুপের অন্তত ৫০-৬০ জনকে টহল দিতে দেখা যায়। ঐ সময় পরিচয় গোপন করে গ্রুপের সদস্য বেলাল ও জব্বারের সাথে কথা বললে তারা জানান, রশিদবিহীন অবৈধ গরু চেক করতে ইউএনও এবং গর্জনিয়ার ইজারাদার রহিম উদ্দিন তাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন। রশিদ বিহীন অবৈধ গরু সনাক্ত হলে ইজারাদারের কাছ থেকে গরু প্রতি ৩ থেকে ৬শত টাকায় রশিদ বা টোকেন সংগ্রহ করা হলে তারা গরুর গাড়ি ছেড়ে দেন।
জানতে চাইলে রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ রাশেদুল ইসলাম জানান, রামুতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের চোরাচালান বন্ধের দাবির প্রেক্ষিতে রশিদ নগর পয়েন্টে অবৈধ গরু আটকের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের নিয়ে গরু চোরাচালান বন্ধে ঐ এলাকায় পর্যবেক্ষণও করা হয়। একই সাথে অবৈধ গরু আটকে জনসাধারনকে সজাগ করা হয় বলে জানান। তবে সড়কে ইউএনও এবং ইজারাদারের নামে টাকা তোলার ব্যাপারে এবং তা বন্ধে ইউএনও যুক্তিযুক্ত কোন উত্তর তিনি দেননি। তিনি শুধু নীতিবাক্য ও কথার মারপ্যাঁচে মূল বিষয় এড়িয়ে যান।
এব্যাপারে রামু উপজেলা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র সমন্বয়ক মোঃ মঈনুর রশিদ ও জায়েদ বীন আমান জানান, তাদের নাম ব্যবহার করে একটি মহল সুক্ষভাবে অর্থনৈতিক ফায়দা হাসিল করছে। মূলত তাদেরকে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রকৃত ঘটনা না জেনে অনেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের উপর আঙ্গুল তুলছে। তারা অবৈধ চোরাচালান বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের কাছে দাবি দিয়েছেন, তবে সড়কে গাড়ি আটকিয়ে অবৈধ গরু আটক করা বা টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়া এসব তাদের কাজ নয়। যারা করছে তারা ডাকাত, সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ। এখানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের কোন সম্পৃক্ততা নাই বলে পরিস্কার করেন এ দুই সমন্বয়ক।
রশিদ নগর বাজার ব্যবসায়ী মোমেনুর রহমান জানান, যারা সড়কে গাড়ি আটকিয়ে টাকা আদায় করছে তারা সকলে চিহ্নিত ডাকাত ও সন্ত্রাসী। যারা একসময় সাবেক চেয়ারম্যান শাহা আলমের অনুসারী হয়ে কাজ করত। ইউএনও এমন লোকজনকে কেন দায়িত্বে নিয়েছেন বোধগম্য নয়।
তিনি আরো জানান, ইউএনও অবৈধ গরু ধৃত করার কথা বললেও এ পর্যন্ত তারা অবৈধ একটি গরুও আটক করেনি, মূলত অবৈধ গরুর গাড়ি থেকে টাকা আদায় করাই মূল উদ্দেশ্য।
রামু উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক সানাউল্লাহ সেলিম জানান, সরকারিভাবে গর্জনিয়া বাজারের নির্ধারিত সীমানা ১ মাইল। এই দূরত্বের মধ্যে ইজারা আদায় করার নিয়ম থাকলেও রামুর ইউএনও অনৈতিকভাবে পুরো উপজেলায় ইজারাদার রহিম উদ্দিনকে হাসিল আদায়ের সুযোগ করে দিয়েছে। তিনি আরো জানান, গর্জনিয়া বাজারের ইজারাদার রহিম উদ্দিনের সাথে যোগসাজশ করে মূলত ইউএনও চোরাচালান বন্ধের নাটক মঞ্চায়ন করছেন। রশিদ বিক্রির মাধ্যমে অবৈধ গরুকে বৈধতা দিচ্ছেন একই সাথে অর্থনৈতিক সুবিধা নিচ্ছেন ইউএনও।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গরু ব্যবসায়ী আক্ষেপ করে জানান, গর্জনিয়া থেকে রশিদ সহকারে গরু ক্রয় করে রশিদ দেখানোর পরও রশিদ নগর পয়েন্টে পুনরায় ৩ শত টাকা করে দিতে হচ্ছে। লাভের গুড় পিপড়ায় খাচ্ছে, বর্তমানে তাদের এই দশা বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন।
রশিদ নগর ইউনিয়ন বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, ডাকাত সর্দার সাদ্দাম, আওয়ামী দোসর সালা উদ্দিন, রমিজ, তৈয়ব ও মোস্তাকের নেতৃত্বে একটি সংজ্ঞবদ্ধ দল সড়কে ব্যারিকেড দিয়ে গরুর গাড়ি থেকে প্রকাশ্য চাঁদা আদায় করছে। সড়কে চাঁদা আদায় বন্ধকরণে ইউনিয়ন বিএনপি উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে নাদেরুজ্জামান উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে একটি পুলিশ বক্স স্থাপনে নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর আবেদন করেছেন বলেও জানান।
এদিকে রামু ফকিরা বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, ব্রিটিশ আমল থেকে রামু ফকিরা বাজারই ছিল উপজেলার একমাত্র স্থায়ী এবং নিয়মিত গরুর বাজার। এই বাজারকে প্রানহীন করার নানা অপতৎপরতা চালানো হয়। যার অংশ হিসেবে ইজারাদার আবদুর রহিমের সাথে যোগসাজশ করে পরিকল্পিতভাবে ইউএনও রামু ফকিরা বাজারের গরু বাজারকে অস্থায়ীর তালিকায় লিপিবদ্ধ করেন। রামু ফকিরা বাজারের ব্যবসায়ীরা স্থায়ী গরুর বাজার হিসেবে রামু গরু বাজারকে অন্তর্ভূক্ত করতে প্রশাসনের দৃষ্টিআকর্ষন করেন।
অন্যদিকে রামুর চাকমারকুল বাজার সৃষ্টিলগ্ন থেকে স্থায়ী বা নিয়মিত পশুর হাট হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল না। কোরবানি মৌসুমে ২ দিন মাত্র বাজার বসানো হত। কিন্তু চলতি বছর ইউএনও কলঘর বাজারের পশুর হাটকে স্থায়ী করেন। যার ফলে এ বছর ১ কোটির অধিক রাজস্ব বেহাত হয়েছে সরকারের।জানতে চাইলে গর্জনিয়া বাজার ইজারাদার রহিম উদ্দিন নিজের বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। রশিদ নগর সড়কে ডাকাতরাই গরুর গাড়ি থেকে চাঁদা আদায় করছে বলে তিনি জানান।
তাজাখবর২৪.কম,ঢাকা: বুধবার, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২শে মাঘ ১৪৩১,৫ শাবান, ১৪৪৬