প্রকাশ: বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ৭:১৮ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
শেরপুরে ইটভাটা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন
সুমন কুমার দে,তাজাখবর২৪.কম,শেরপুর: জেলার শেরপুর সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নের প্রতাবিয়া গ্রামে "এএমবি" নামে একটি ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ভুক্তভোগী এলাকাবাসী। রবিবার (১৫জানুয়ারি) দুপুরে শেরপুর জেলা প্রশাসকের এর কার্যালয়ে সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন এলাকাবাসী।জানা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের নীতিমালাকে উপেক্ষা করে ইট ভাটাটি জনবহুল এলাকায় স্থাপন করা হয়। ফলে বিপর্যয় ঘটছে পরিবেশের। এছাড়া ইটভাটার মাটি ও ইট পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত পিক-আপ ভ্যান, ট্রলির চাপায় বিনষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক। ধূলাবালুর কারণে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নানা বয়সী মানুষ।
২০২১ সালে ইটভাটার মালিক মানিক মিয়া জনবসতিপূর্ণ এলাকায় স্থানীয়দের বাঁধার মুখে ইটভাটাটি স্থাপন করে। স্থানীয়দের আবেদনের প্রেক্ষিতে পরিবেশগত অবস্থান বিবেচনা করে তৎকালীন পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. রাসেল নোমান পত্রের মাধ্যমে অবৈধ ইট ভাটাটি নির্মাণ সংক্রান্ত কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশনা প্রদান করেন। সে সময় জেলা প্রশাসনের কার্যালয়েও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এলাকাবাসী। কিন্তু তৎকালীন আওয়ামী লীগের জেলা এবং স্থানীয় নেতাদের মোটা টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে ইটভাটা নির্মাণ করেন মানিক মিয়া। আ'লীগ সরকার পরিবর্তনের পর মানিক মিয়া তার খোলস পাল্টে বিএনপি'র প্রভাবশালী দুই নেতার সঙ্গে আঁতাত করে ইটভাটাটি চালুর চেষ্টা করছেন। ফলে একটি ইট ভাটার কারণে প্রতাবিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিজাম উদ্দিন আহমেদ মডেল কলেজ, চৈতনখিলা জাব্বারিয়া দাখিল মাদ্রাসা, প্রতাবিয়া পূর্বপাড়া নূরানী কওমি মাদ্রাসা, আদিবা জান্নাত মহিলা মাদ্রাসা, প্রতাবিয়া জামে মসজিদ, প্রতাবিয়া পূর্ব পাড়া জামে মসজিদ, প্রতাবিয়া দক্ষিণ পাড়া জামে মসজিদ সহ সেখানকার সব বয়সী মানুষ রয়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে।
শেরপুরে ইটভাটা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন
স্হায়ীয় এক সমাজ সেবক শাকিল আহমেদ শিমুল বলেন, এই ইটভাটার ধুয়ায় পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। কালো ধোঁয়ায় মানুষজন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ভাটার ট্রলির কারণে অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ভাটার কালো ধোঁয়ার কারণে গাছপালা বিবর্ণ হয়ে পড়ছে। গাছে ফলমূল ধরা কমে গেছে। স্থানীয় লোকজন ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে এই পরিবেশ বিধ্বংসকারী ব্যক্তিরা আমাদের বুকের উপর আমাদেরকে মৃত্যুর মুখে ফেলে ভাটা পরিচালনা করছে।
স্থানীয় জামান মিয়া, হাবিবুর রহমান হাবিব, এনামুল হক সহ অর্ধ শতাধিক এলাকাবাসী জানান, ভাটার মালিক আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির প্রভাব দেখিয়েছে। এখন বিএনপি'র নেতাদের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। কিন্তু কেউ আমাদের এলাকার চিন্তা করছে না। এ ব্যাপারে বাজিতখিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাসান খুররুম বলেন, আমার জানামতে এবার ভাটা চালু হলেও এখনো ইট পুড়ানো শুরু হয়নি। এলাকাবাসী ও মালিক পক্ষের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে।প্রতাবিয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড বিএনপি'র সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা কৃষক দলের সদস্য মো. জামান মিয়া বলেন, পরিবেশ বিপর্যয়ে এমন ভাটা বন্ধ করা হউক।
ইট ভাটার মালিক মানিক মিয়া জানান, সবাই যেভাবে ভাটা পরিচালনা করছে, আমিও সেভাবেই পরিচালনা করতেছি। আমি দুইজন নেতাকে ৫০ শতাংশ মালিকানা দিয়ে নতুন করে অংশী মালিকানার মাধ্যমে ইটভাটা পরিচালনার কথা ভাবতেছি। স্থানীয়রা হিংসা করে ভাটায় ইট পুড়াতে বাঁধা দিচ্ছে।জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. নূর কুতুবে আলম সিদ্দিক জানান, এএমবি ইটভাটাটি সম্পর্কে আমি কিছু জানিনা। আপনার কাছে প্রথম শুনলাম। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, যেহেতু ইটভাটা এখন বন্ধ আছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখাবেন বলেও জানান তিনি।পরিবেশ রক্ষায় স্থায়ীভাবে ইটভাটাটি বন্ধ করবে প্রশাসন, এমনটাই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
তাজাখবর২৪.কম,ঢাকা: বুধবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১,১৪ রজব, ১৪৪৬