প্রকাশ: সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১২:০০ এএম | অনলাইন সংস্করণ
মোহাম্মদ খোরশেদ হেলালী,তাজাখবর২৪.কম,কক্সবাজার: অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের অন্তত ৬ কিলোমিটার এলাকায় বালিয়াড়িতে তীব্র ভাঙন ও ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে সৈকতের চারপাশে কোন না কোন ভাঙন হবেই। এতে দিনদিন জৌলুশ হারিয়ে সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম এই সমুদ্র সৈকত।রোববার দুপুরে ( ০১ সেপ্টেম্বর ) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- সমুদ্র সৈকতের কলাতলী বীচ পয়েন্টে নামার আগে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের পাশে বড় ধরনের ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। গেল কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে সড়কের পাশের বালিয়াড়ি ক্ষয় হয়ে যায়। এতে পর্যটকদের চলাচলে যেমন কষ্ট হচ্ছে, তেমনি শ্রীহীন হয়ে পড়েছে ওই স্থানটি৷ কলাতলী পয়েন্ট ছাড়াও সুগন্ধা, লাবণী পয়েন্ট ও কবিতা চত্বরসহ এসব এলাকার অন্তত ১৫ টি স্থানে ছোট-বড় ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে।
সমুদ্র জোয়ার এবং বন্যার পানিতে বালুচর ও সৈকতের পাড় ভেঙে এই ভাঙন সৃষ্টি হয়। এতে পর্যটকদের হাঁটা -চলা করতে সমস্যা হচ্ছে। গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কক্সবাজারে ভারী বর্ষণ অব্যাহত ছিল । এতে বৃষ্টির পানিতে কলাতলী হোটেল -মোটেল জোন ডুবে যায়। পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানি সরাসরি সমুদ্র সৈকতে এসে পড়ে । এর ফলে বালুচর ক্ষয় হয়ে ভাঙনের দেখা দেয়।স্থানীয়রা বলছেন - টানা বৃষ্টিতে সৈকতের বালিয়াড়ি ভেঙে সৌন্দর্য হারাচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত । ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় নিচু এলাকা দিয়ে পানি নামার কারণে এমন অবস্থা তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্র সৈকত ভাঙলেও তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্টরা।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায় - সৈকতে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ঢলের পানিতে বালিয়াড়ি বিলীন হচ্ছে। বালুচরে সৃজিত সাগরলতাও হারিয়ে যাচ্ছে। ২০২২ সালে লাবণী পয়েন্টে যখন ভাঙন শুরু হয় তখন পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রায় ৬৮ লাখ টাকা খরচ করে এক কিলোমিটার জিওটিউব ব্যাগ বাঁধ নির্মাণ করেছিল। তাতে কিছুটা ভাঙন রোধ হলেও সৈকতের সুগন্ধা, কলাতলীসহ নতুন এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। সাগরে বালিয়াড়ি বিলীন হওয়ায় গত দুই বছরে কয়েক হাজার ঝাউগাছ উপড়ে পড়েছে। কয়েকটি হোটেল ও শতাধিক দোকানপাট বিলীনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
পর্যটন ব্যবসায়ী মুকিম খান জানান - অনেক আগে থেকে সৈকতের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে। এখন যে সৌন্দর্য বাকি আছে সেটিও বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে । এ অবস্থায় দিন দিন সৌন্দর্য হারাচ্ছে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। সৈকতের ভাঙনরোধ করা না গেলে দ্রুতই বিলুপ্ত হবে বালিয়াড়ি। এ অবস্থায় কক্সবাজার বিমুখ হবে পর্যটকরা।
শামুক ঝিনুক ব্যবসায়ী শাকিবুল করিম বলেন- দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্র সৈকতে ভাঙন হলেও সংস্কারের জন্যে কোন উদ্যোগ নেয়নি কর্তৃপক্ষ। সবাই শুধু দূর্নীতি আর অনিয়ম করেছে। সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষায় কেউ কাজ করেনি৷ সৈকতের নানা স্থানে ভাঙনের কারণে ঠিক মতো হাঁটা - চলা করতে পারেনা পর্যটকরা। সমুদ্র সৈকতে এই অবস্থার জন্যে পর্যটকরা বিরক্তি প্রকাশ করছেন। একসময় কক্সবাজার বিমুখ হয়ে যাবে পর্যটকরা। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য অচল হয়ে যাবে।সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণে আসা পর্যটক সমির শাহা বলেন - সমুদ্র সৈকতের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে। সৈকত দ্বিখণ্ডিত হয়ে পড়ায় হাঁটার পরিবেশ নেই। এছাড়া সৈকত পাড়ে ময়লা আবর্জনা ভরপুর। গত ১০ বছরে এমন পরিবেশ আর দেখা যায়নি।
ধরিত্রী রক্ষায় আমরা ( ধরা) কক্সবাজার শাখার যুগ্ম আহবায়ক এইচএম ফরিদুল আলম শাহীন বলেন- বৈরী পরিবেশে সাগর উত্তাল, ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সৈকতের বিভিন্ন স্থানে বালিয়াড়ি বিলীন হচ্ছে। এতে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের সৌন্দর্যহানি যেমন হচ্ছে তেমনি পর্যটকেরা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত সময়ের মধ্যে শহরের জলাবদ্ধতা নিরসন, সৈকতের ভাঙনরোধ ও ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করে পরিবেশের সৌন্দর্য রক্ষা করা।কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসিফ আহমদ জানান - জরুরি ভিত্তিতে সৈকতের ভাঙনরোধে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সৈকত রক্ষার স্থায়ী সমাধানে বিশেষ একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
তাজাখবর২৪.কম: ঢাকা সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৮ ভাদ্র ১৪৩১, ২৮ সফর, ১৪৪৬