প্রকাশ: শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৫, ৭:৫১ পিএম (ভিজিট : )
ভোলা সফরে ৩ উপদেষ্টা।
তাজাখবর২৪.কম,ঢাকা: দেশে ইউরিয়া সারের ঘাটতি পূরণ, বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় ও উপকূলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ভোলায় সার কারখানা নির্মাণের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। সেই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে সরকারের ৩ উপদেষ্টা একযোগে পরিদর্শন করেছেন। সেখানকার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে স্থানীয় প্রশাসন ও পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তারা বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন।শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সরকারি সফরে ভোলায় যান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, শিল্প, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন।
দিনভর তারা ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ফেরিঘাট এলাকা এবং বাফার গোডাউন নির্মাণস্থল, বিসিক লিল্পনগরী ও শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র পরিদর্শন করেন। বিকেলে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ‘ভোলা জেলায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন’ সংক্রান্ত মতবিনিময় সভা করেন। এতে প্রশাসনিক কর্মকতা, রাজনৈতিক নেতবৃন্দ ও বিভিন্ন পেশাজীবীরা অংশ নেন। সভায় সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরেন ৩ উপদেষ্টা। সভাতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান।
পরিদর্শন শেষে শিল্প ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান সাংবাদিকদের বলেন, ভোলায় গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। দেশের অনেক জায়গায় গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। এই গ্যাসকে কিভাবে আমরা দেশের কাজে লাগাতে পারি, গ্যাস থেকে সার প্রস্তুত করতে পারি এর সম্ভাব্যতা দেখছি।তিনি আরও বলেন, সারা দেশে ৩৪টি বাফার গোডাউন নির্মাণ করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে একটি গোডাউন ভোলায় হচ্ছে এবং এর কাজ এরইমধ্যে শুরু হয়েছে। সেই কাজের অগ্রগতি দেখতে এসেছি। এই কাজ শেষ হবে ২০২৭ সালে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ভোলার গ্যাস দিয়ে ভোলায় শিল্প কারখানা করা হবে। বাইরে নেয়া হবে না। সেই কারণেই আমরা ৩ উপদেষ্টা সরেজমিনে এসেছি। এখানে সার কারখানা হবে, বেসরকারি শিল্প কারখানা, অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হবে। বিসিককে সচল করা হবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন বলেন, শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য শুধু গ্যাসই যথেষ্ট নয়। এখানে শিল্পের সক্ষমতা তৈরি করতে গেলে আরও অনেক কিছুর প্রয়োজন। শিল্পের জন্য একটা বাজার দরকার হয়, মেটারিয়ালের দরকার হয়, শ্রমিকের দরকার হয়। ভোলায় বিনিয়োগ সক্ষমতা দিয়ে যথেষ্টা সুযোগ আছে। এ জন্য বিনিয়োগের প্রয়োজন।
জানা যায়, চলতি অর্থ বছর দেশে ইউরিয়া সারের চাহিদা ছিল ২৭ লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে দেশে উৎপাদন হয়েছে ১১ লাখ ২৩ মেট্রিক টন। বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে প্রায় ১৬ মেট্রিক টন। দেশের মোট চাহিদার মধ্যে উপকূলীয় এলাকার চাহিদা ছিল প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টন।
এদিকে বাপেক্সের তথ্য অনুযায়ী, ভোলা জেলার গ্যাস ফিল্ডগুলোয় ২ দশমিক ২৪ ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট (টিসিএফ) গ্যাস মজুদ রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে প্রতিদিন ১৮২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব। চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে ৭২ থেকে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের বিষয় বিবেচনা করে ভোলায় বার্ষিক ৫ দশমিক ৬১ মেট্রিক টন (দৈনিক ১৭০০ মেট্রিক টন) উৎপাদন ক্ষমতার একটি ইউরিয়া সার কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। যার প্রাথমিক সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে প্রস্তাব শিল্প মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।
প্রস্তাবিত সার কারখানার দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন। প্রয়োজনীয় দৈনিক প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিমান ৪০ থেকে ৫০ এমএমসিএফ। নির্মাণের জন্য জমি লাগবে প্রায় ৩০০ একর। ২০২৭ সালের ডিসেম্বর থেকে কাজ শুরু করে ২০৩০ সালের ডিসেম্বর শেষ করার সম্ভাব্য সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা।সভা সূত্রে জানা যায়, ৫ লাখ মেট্রিক টন সার আমদানি করতে ২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। ভোলায় কারখানা স্থাপন করা হলে উৎপাদন বাবদ খরচ হবে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এতে প্রায় ৯৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
তাজাখবর২৪.কম,ঢাকা: শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ২৯শে কার্তিক ১৪৩২,২২ জুমাদাল উলা, ১৪৪৭