সিলেটে উপজেলা গুলোতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত !! নগরীতে উন্নতি
তাজাখবর২৪.কম,ঢাকা:
প্রকাশ: সোমবার, ৮ জুলাই, ২০২৪, ১২:০০ এএম | অনলাইন সংস্করণ
সিলেটে উপজেলা গুলোতে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত !! নগরীতে উন্নতি
আবুল কাশেম রুমন,তাজাখবর২৪.কম,সিলেট: সিলেটে বন্যার পরিস্থিতি নগরীতে উন্নতি হচ্ছে। তবে বিভাগের বিভিন্ন উপজেলায় পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় সিলেট নগরে জলাবদ্ধ এলাকা থেকে পানি সরে যাচ্ছে। এদিকে উপজেলা পর্যায়ে ধীরগতিতে পানি কমায় দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হচ্ছে। টানা বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদ-নদীর বাঁধ ভেঙে ঐসব এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ২৪ ঘন্টায় সিলেটের নদ-নদীর পানি সবকটি পয়েন্টে কিছুটা কমেছে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) সিলেট সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার ৪টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে রোববার সন্ধ্যা ৬টায় বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর অমলশীদ পয়েন্টে ৬৬ সেন্টিমিটার, শেওলা পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার এবং ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে পানি বিপদসীমারা ৯৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট নগরে জলাবদ্ধ অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও মানুষের ভোগান্তি কমছে না। কিছু স্থানে এখনো ঘর থেকে বের হলেই পানিতে নেমেই যাতায়াত করতে হচ্ছে। নগরের শাহজালাল উপশহর ডি ব্লক এলাকার বাসিন্দা ফাহাদ মো. হোসেন বলেন, ঘর ও সড়ক থেকে পানি নেমে গেছে। ঘর গোছাতে এখন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।উপজেলা প্রতিনিধিরা জানান, সম্প্রতি সিলেটের জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন এলাকায় কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙে এবং পানি উপচে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিয়ানীবাজারের মুড়িয়া ইউপির সদস্য বদরুল ইসলাম বলেন, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বন্যার পানি গত কয়েক দিনের মতো একই জায়গায় রয়েছে।পাউবো সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানান, বৃষ্টি কমে আসায় পানি নামতে শুরু করেছে। তবে ধীরগতিতে পানি নামছে। আরও কয়েক দিন এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে।
সুনামগঞ্জ :
বৃষ্টি ও ভারতীয় ঢল বন্ধ থাকায় সুনামগঞ্জেও বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। জেলার নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নতুন করে ভারী বর্ষণ না হলে পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকবে বলে জানান পাউবো ও জেলা প্রশাসন কর্তৃপক্ষ।জানা গেছে, ১৭ জুন ঈদের দিন সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দারা প্রথম দফায় বন্যার মুখোমুখি হন। সেই বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই ৩০ জুন থেকে ফের দেখা দেয় বন্যা। বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও হাওরপাড়ের বাসিন্দাদের দূর্ভোগ কাটেনি। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষের ভোগান্তি এখনও চরমে। খেয়ে না খেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে কাটছে দিন। নতুন করে বসতঘর নির্মাণ ও গৃহপালিত পশু নিয়ে অনেকে পড়েছেন বিপাকে।স্থানীয়রা জানান, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও হাওরপাড়ের মানুষের ভোগান্তি কমেনি। অনেকের বসতঘরের ভিটা হাওরের ঢেউয়ে (আফাল) ধসে গেছে, ঘরের বেড়া টিন ছিঁড়ে চৌচির হয়েছে। এছাড়াও আফালে খুবলে নিয়েছে অনেকের বসত ভিটার এক থেকে দুই ফুট মাটি। পা ঢুকে যায় কাদা মাটিতে। বেড়ার গোড়ায় ফাঁক সৃষ্টি হওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন মানুষজন। সর্বক্ষণই হাওরের উথাল-পাতাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে হাওরপাড়ের বসতঘরে। অনেকে হাওরের ঢেউ থেকে বসত ভিটা রক্ষা করতে চারপাশে কচুরিপানা দিয়ে মাটির ধস আটকানোর চেষ্টা করছেন। এদিকে অতি বৃষ্টি ও বন্যায় নষ্ট হয়েছে পশু খাদ্য। বন্যায় মরেছে গবাদিপশুও। পশুখাদ্য বিশেষ করে গরুর খাদ্যের জন্য এখন হাওরপাড়ের বাসিন্দারা কচুরিপানার উপর নির্ভরশীল। গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট থেকেও পানি না নামায় নৌকা ছাড়া চলাচলের উপায়ও নেই।সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার বলেন, সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে বিপদসীমার ১৮ সে.মি নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে হাওরে পানি ধীরে ধীরে কমছে। আগামী ২৪ ঘন্টায় ভারী থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে। তবে বন্যা পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হবে না।জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী বললেন, প্রথম দফা বন্যা শেষ হতে না হতেই দ্বিতীয় দফা বন্যা চলে এসেছে। সেজন্য ক্ষয়ক্ষতির সম্পূর্ণ তালিকা এখনও তৈরি হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত সবাই ঘর পাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা পূর্ণাঙ্গ বিবরণ তৈরি করে পাঠাব, তারপর যে সিদ্ধান্ত আসে পালিত হবে।
মৌলভীবাজার :
জেলার জুড়ী ও কুলাউড়া উপজেলার নিচু এলাকা থেকে এখনো বন্যার পানি নামেনি। রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনকি উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স এখনো ডুবে আছে। এসব এলাকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।স্থানীয়রা জানান, জুড়ী উপজেলার সদর জায়ফরনগর ইউনিয়নের নূরপুর এলাকায় কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেললাইনের ওপর টিন-বাঁশের ঘর বানিয়ে গরু, ছাগল ও ভেড়া বেঁধে রাখা হয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে রেললাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ। তাই স্থানটি উঁচু থাকায় বাড়িতে পানি ওঠার পরপরই কয়েক পরিবার গবাদিপশু এখানে নিয়ে আসেন। টিন-বাঁশের অস্থায়ী ঘর তুলে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করেছেন। চোরের ভয়ে গবাদিপশুদের সঙ্গেই রাত কাটাতে হচ্ছে তাদের।স্থানীয় লোকজন বলেন, আশপাশের বাহাদুরপুর, শাহপুর, ভাটি শাহপুর ও নিশ্চিন্তপুর এলাকার লোকজন এখনো পানিবন্দী। রাস্তাঘাট ডুবে আছে। নৌকা ছাড়া এসব এলাকায় যাতায়াতের কোনো উপায় নেই। জরুরি নানা প্রয়োজনে লোকজনকে উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে যেতে হয়। অনেকে ব্যক্তিগত নৌকায় করে চলাচল করেন। আর যাঁদের নৌকা নেই, তাঁরা ভাড়ায় চালিত নৌকায় চলাচল করেন। এসব নৌকায় করে মালামালও পরিবহন করা হয়।
তাজাখবর২৪.কম: ঢাকা সোমবার, ৮ জুলাই ২০২৪, ২৪শে আষাঢ় ১৪৩১,১ মহররম ১৪৪৬