মোবাইলে ছেলে ওয়াসিম আলীর সঙ্গে কথা বলছেন আর কাঁদছেন অসহায় মা পেমেলা বিবি।
তাজাখবর২৪.কম,ঢাকা: মা তুমি আমাকে তাড়াতাড়ি বের কর। এরা (মাফিয়া) আমাকে মেরে ফেলবে। ১৪ লাখ টাকা বাড়ির ভিটাটুকু বিক্রি করে হলেও দাও মা। টাকা পাঠিয়ে তুমি আমাকে জান ভিক্ষা দাও মা। মা আমি আর এদের মারধর সহ্য করতে পারছিনা। গোটা শরীরে ঘা হয়ে গেছে।বুধবার (২৬ জুন) সকালে লিবিয়ায় আটক ওয়াসিম আলী মাফিয়াদের কবল থেকে মুক্তি পেতে মোবাইলে ফোন দিয়ে মা পেমেলা বিবির কাছে এমন আকুতি করেন।মাফিয়াদের কাছে জিম্মি ওয়াসিম রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার ৫ নম্বর ঝালুকা ইউনিয়নের সায়বাড় গ্রামের আব্দুর সাত্তারের ছেলে।ওয়াসিমের পরিবারের দাবি, ওয়াসিম দেড় বছর আগে চাচাতো ভাই ইসমাইলের মাধ্যমে লিবিয়ায় যান। সেখানে একটি হাসপাতালে কাজ করছিল। এমন অবস্থায় ইসমাইল ওয়াসিমকে ইতালি পাঠানোর প্রলোভন দেয়। পাঁচমাস আগে লিবিয়ার ত্রিপোলিতে মাফিয়াদের হাতে বন্দি হয় ওয়াসিম।
লিবিয়ায় জিম্মি ওয়াসিম আলীর মা পেমেলা বিবি বলেন, ওয়াসিমের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত করতে ইসমাইলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এর একদিন পর মাফিয়ারা ১৫ লাখ টাকা দাবি করে।তার ভাষ্য, মাফিয়াদের জানিয়েছি আমি গরিব মানুষ টাকা দেয়ার সামর্থ্য নাই। তাও তারা শোনে না। খালি ছেলেকে মারধর করে।ওয়াসিমের মামা আব্দুল জলিল বলেন, মাফিয়াদের হাত থেকে ছাড়াতে জায়গা জমি বিক্রি ও বন্ধক রেখে ইসমাইলকে সবমিলিয়ে ৮ লাখ টাকা দেয়া হয় ব্যাংকের মাধ্যমে। কিছু টাকা ইসমাইলের মা ও ভাই নিয়ে গেছে। এখন তারা টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছে।
জলিল জানান, কোর্টে ইসমাইল ও তার মা-বাবার নামে অভিযোগ করা হয়েছে। তাদের আদালতে হাজির হওয়ার তারিখ ছিল মঙ্গলবার। কিন্তু তারা হাজির হয়নি।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগেও লিবিয়ায় নিয়ে গিয়ে জিম্মি করে টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে সায়বাড় গ্রামের মোস্তফার ছেলে ইসমাইলের বিরুদ্ধে। এই ইসমাইলের মাধ্যমে এলাকা ও আশপাশের লিবিয়ায় যারা গেছে তারা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হয়েছে।সর্বশেষ ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার বিনিময়ে লিবিয়ায় জিম্মি দশা থেকে ফিরেছেন সায়বাড় গ্রামের রহেদ আলীর ছেলে ইসমাইল হোসেন। তিনি ৫ মাস আগে দেশে ফিরেছেন।
জিম্মিদশা থেকে ফেরত আসা ইসমাইলের চাচা মৌলুভ ইসলাম বলেন, মাফিয়া গ্রুপের সদস্য ইসমাইল তার ভাতিজা ইসমাইল হোসেনকে লিবিয়ায় নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছিল। মারধর, খাওয়া-দাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে তার ভাতিজা লিবিয়া থেকে কান্নাকাটি করে টাকা দাবি করে। পরে স্থানীয়ভাবে ব্যাংকের মাধ্যমে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা পাঠিয়ে তাকে দেশে আনা হয়েছে। মাফিয়াদের সঙ্গে কথা বলা ও তাদের থেকে ব্যাংকের একাউন্ট নম্বর নেয়া, সব বিষয়ে জড়িত ছিল মোস্তফার ছেলে ইসমাইল। সে এখন লিবিয়ায় মাস্তান, মাফিয়া নামে পরিচিত।এ বিষয়ে দুর্গাপুর উপজেলার ৫ নম্বর ঝালুকা ইউনিয়নের সায়বাড় ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল আওয়াল মোল্লা বলেন, ৩ লাখ টাকা দেয়ার দিনে তিনি ছিলেন। পরে আবার টাকা চেয়েছিল। তাদের দাবি ১২ লাখ টাকা। পরবর্তীতে টাকা দিয়েছে কিনা জানা নেই।
তিনি আরও বলেন, ইসমাইল বিদেশে মানুষ নিয়ে জিম্মি করে টাকা নেয়, এর আগেও এমন অভিযোগ উঠেছে। একই এলাকার মিলন ও ইসমাইলকে ৫২ দিন ধরে একইভাবে আটকে রেখেছিল। যদিও পরে তাদের উদ্ধার করা হয়। বিষয়টা দুঃখজনক। আমরাও নিজের জায়গা থেকে চেষ্টা করছি। ভুক্তভোগীরা রাজশাহী লিগ্যাল অফিসে অভিযোগ দিয়েছে।দুর্গাপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলামের মুঠোফোনে কল করলেও তাকে না পাওয়ায় বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তাজাখবর২৪.কম: ঢাকা বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ জিলহজ্ব ১৪৪৫