দেশের ব্যাংক খাতের খেলাপি গ্রাহকদের বিরুদ্ধে মামলা না করে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) মাধ্যমে ঋণ আদায় করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।রোববার (১২ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি) এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।এতে বলা হয়, অর্থঋণ আদালত আইন, ২০০৩-এ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দ্রুত আদায়ে আদালতের বাইরে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতিকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ওই আইনের অধীনে দায়েরকৃত মামলায় বিবাদীর লিখিত জবাব দাখিলের পর ধারা ২২ অনুসারে আদালত কর্তৃক প্রতিটি মামলা পক্ষগণের মাধ্যমে মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে পাঠানো হয়।
মধ্যস্থতার মাধ্যমে কোনো মামলা নিষ্পত্তির আদেশ চূড়ান্ত মর্মে গণ্য হবে এবং ওই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে কোনো আপিল বা রিভিশন দায়ের করা যাবে না মর্মেও ঐ ধারায় উল্লেখ রয়েছে। উক্ত আইন অনুসারে আদালত কর্তৃক রায় বা আদেশ প্রদানের আগে মামলার যেকোনো পর্যায়ে উভয় পক্ষ আদালতের অনুমতিক্রমে বিকল্প পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তি করতে পারবে।খেলাপি ঋণ আদায়ে আদালতের বাইরে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিতে (এডিআর) অর্থঋণ আদালত আইনে নির্দেশনা আছে। কিন্তু মধ্যস্থতার ক্ষেত্রে ব্যাংকের ছাড় না দেয়ার কারণে খেলাপি ঋণ আদায় ব্যাহত হচ্ছে। এই দীর্ঘসূত্রতা এড়িয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগের মাধ্যমে ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণের কমপক্ষে ১ শতাংশ আদায়ের নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। প্রতি ষান্মাসিকে অনুষ্ঠিত পরিচালক পর্ষদের সভায় এসংক্রান্ত অগ্রগতিবিষয়ক স্মারক উপস্থাপন করতে হবে। পরিচালক পর্ষদ আদায় অগ্রগতির বিষয়ে অবগত হয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করবে।খেলাপি ঋণ আদায়ের চার পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পদক্ষেপগুলো হলো-
১) খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য জারিতব্য নোটিশে গ্রাহকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা বা সদিচ্ছাকে বিবেচনায় নিয়ে কেস টু কেস ভিত্তিতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
২) ব্যাংকার ও গ্রাহক উভয় পক্ষের সম্মতিতে বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আর্বিট্রেশন সেন্টার (বিআইএসি)সহ অনুরূপ প্রতিষ্ঠানে তালিকাভুক্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ মধ্যস্থতাকারী অথবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারক, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, আইনজীবী অথবা অন্য যে কোনো উপযুক্ত ব্যক্তি, যাদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে সফলতার ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে তাদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
৩) মধ্যস্থতাকারী নিযুক্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিরোধীয় পক্ষগণ ও মধ্যস্থতাকারী পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে পারিশ্রমিকের পরিমাণ, পরিশোধকারী পক্ষ ইত্যাদি নির্ধারণ এবং যথাসময়ে তা পরিশোধ নিশ্চিত করা।
৪) মধ্যস্থতাকে সফল করা এবং খেলাপি ঋণ দ্রুত আদায়ের স্বার্থে প্রয়োজনে কেস টু কেস ভিত্তিতে বিদ্যমান বিআরপিডি সার্কুলার বা নির্দেশনা মোতাবেক ব্যাংক কর্তৃক ছাড় প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় আরও বলা হয়, মধ্যস্থতার মাধ্যমে ঋণ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনকারী শাখা বা সংশ্লিষ্ট টিমকে স্বীকৃতি প্রদান বা পুরস্কৃত করার পাশাপাশি আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা রেখে ব্যাংকসমূহ বিদ্যমান আইন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারসমূহের নির্দেশনার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এবং মধ্যস্থতায় ব্যর্থতার ক্ষেত্রে অন্তর্নিহিত কারণ অনুসন্ধান করতে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করে দেশে কার্যত সব তফসিলি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তাজাখবর২৪.কম:ঢাকা সোমবার ,১৩মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫