ঘরের মাঠে ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষকে দুমড়ে মুচড়ে ফাইনালে এলেও শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাত্তাই পায়নি ভারত। এবার দুয়ারে কড়া নাড়ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ক্রিকেটের এই জনপ্রিয় সংস্করণের প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়ন ভারতের এবার আছে তারকায় ঠাঁসা দল। অসংখ্য পারফরমারের ভেতর থেকে বিশ্বকাপ দল বেছে নেওয়ার কঠিন চ্যালেঞ্জ নির্বাচকদের সামনে।এক মাস পর মাঠে গড়াচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। তার আগে আগামীকাল বুধবারের (১ মে) মধ্যে বিশ্বকাপ স্কোয়াড আইসিসির কাছে জমা দিতে হবে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে। প্রথম দল হিসেবে নিউজিল্যান্ড এরই মধ্যে দল ঘোষণা করেছে। বাকি দলগুলোকেও আজ কালকের মধ্যেই স্কোয়াড ঘোষণা করবে।ভারতীয় দল চূড়ান্ত করতে আজ মঙ্গলবার (৩০ মে) আহমেদাবাদে বৈঠক ডেকেছে ভারতীয় ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিসিআই। সেই বৈঠকেই চূড়ান্ত হবে কারা যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিমানের টিকিট পাচ্ছেন।
ভারতের বিশ্বকাপের দল মোটামুটি অনুমিত হলেও বেশ কয়েকটি পজিশন নিয়ে এখনও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছেন নির্বাচকরা। সবচেয়ে বড় সংকটের জায়গাটা হচ্ছে- বিশ্বকাপে কারা থাকছেন ভারতের উইকেটকিপার হিসেবে। মূল ও ব্যাকআপ হিসেবে স্কোয়াডে দুজন উইকেটকিপার রাখার কথা নির্বাচকদের। কিন্তু এই ভূমিকায় দলে জায়গা পেতে লড়ছেন কমপক্ষে চারজন। এছাড়া আলোচনায় আছে হার্দিক পান্ডিয়ার নাম। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়কের বাজে ফর্ম ভাবাচ্ছে নির্বাচকদের।
হার্দিক পান্ডিয়া কি থাকছেন দলে: হার্দিক পান্ডিয়ার মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে ফেরাটা যে রকম রাজসিক হবে বলে আশা করা হয়েছিল, তা হয়নি। ওয়ানডে বিশ্বকাপে ইনজুরির কারণে ছিটকে যাওয়ার পর আইপিএলে ফিরেই রোহিত শর্মাকে সরিয়ে মুম্বাইয়ের অধিনায়কত্ব পেলেও ব্যাটে-বলে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে ব্যর্থ তিনি।
৯ ম্যাচে ব্যাট করে ১৫১.৫৩ স্ট্রাইক রেটে মাত্র ১৯৭ রান করেছেন হার্দিক। যদিও মুম্বাইয়ের হয়ে তিনি লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করেছেন। তবে জাতীয় দলে জায়গা পেলে তাকে পাঁচ বা ছয় নম্বরে ব্যাট করতে হবে। হার্দিকের বোলিংও ভারতের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ। মুম্বাইয়ের অধিনায়ক এখন পর্যন্ত ১৯ ওভার বল করে ২২৭ রান দিয়েছেন। ওভারপ্রতি গড়ে ১১ রান করে দিয়ে ও ৫৬.৭৫ গড়ে মাত্র ৪ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। ফলে বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়তে পারেন হার্দিক।স্পিনার হিসেবে কারা সুযোগ পাচ্ছেন: আইপিএলের সফলতম বোলার জুঝবেন্দ্র চাহল এবারেও দারুণ ফর্মে। রাজস্থানের জার্সিতে ৯ ম্যাচে ১৩ উইকেট শিকার করে সেরা পাঁচ উইকেট শিকারির ঠিক পরেই আছেন তিনি। চাহল ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াডে থাকলেও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি।
এবারের বিশ্বকাপের দলে চাহলের পথের কাটা হতে পারেন কুলদীপ যাদব। এই চায়নাম্যান ৮ ম্যাচে ১২ উইকেট শিকার করেছেন। ৯ উইকেট শিকারি অক্ষর প্যাটেলের সঙ্গে দিল্লিতে প্রাণঘাতী এক জুটি গড়েছেন তিনি। স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে রবীন্দ্র জাদেজা তো আছেনই, সঙ্গে আছেন রবি বিষ্ণয়ীও। তবে আইপিএলে দুজনই ফর্মের সঙ্গে লড়ছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের উইকেট উপমহাদেশের মতোই স্পিন বান্ধব হওয়ায় তিনজন, এমনকি চারজন স্পিনারকেও দলে রাখতে পারেন। এখন দেখার বিষয়, কপাল খোলে কার।ওপেনিংয়ে রোহিতের পার্টনার: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একজন ওপেনার যে রোহিত শর্মাই থাকছেন তা নিশ্চিত। তবে রোহিতের সঙ্গী কে হচ্ছেন তা নিয়েই রহস্য। ওপেনিংয়ে অপর প্রান্তের লড়াইটা রাজস্থানের যশস্বী জয়সওয়াল ও গুজরাটের শুভমান গিলের মধ্যে। আসলে কী তাই?
আইপিএলের এবারের আসরে ওপেনার হিসেবে এরই মধ্যে ৫০০ রান করেছেন বিরাট কোহলি। এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের অরেঞ্জ ক্যাপও তার মাথায়। স্ট্রাইক রেট ও গড় বিবেচনায় পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৬ এর ৯৭৩ রানের অবিশ্বাস্য মৌসুমের পর এবারই সেরা মৌসুম কাটাচ্ছেন কোহলি। আবার কোহলিকে ওপেনার হিসেবে খেলানোর বিষয়টি বিসিসিআইয়ের বিবেচনাতেও আছে। এখন দেখার বিষয়, কোহলিকে শেষ পর্যন্ত ওপেনার হিসেবে নাকি তিন নম্বরে খেলানো হয়।
কে হবেন বিশ্বকাপের উইকেটকিপার: বিশ্বকাপের স্কোয়াডে নির্বাচকরা যতদূর সম্ভব দুইজন উইকেটকিপার-ব্যাটার রাখবেন। এখানে লড়াইটা দিল্লির রিশভ পন্ত, রাজস্থানের সাঞ্জু স্যামসন এবং লখনৌয়ের কে এল রাহুলের মধ্যে। দীনেশ কার্তিকের নাম শোনা গেলেও বয়স ও অতীতের ধারাবাহিকতার ইতিহাস মাথায় রেখে বলা যায় তার সুযোগ একদমই ক্ষীণ।
এই মৌসুমে লড়াইয়ে থাকা তিন তারকার প্রত্যেকে ৩৫০ রানের বেশি করেছেন। শীর্ষে থাকা রাজস্থান রয়্যালসের জার্সিতে সাঞ্জু কাটাচ্ছেন দারুণ মৌসুম। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনিই। গুঞ্জন অনুযায়ী, অতীতে সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হলেও এবার তাকে ভালোভাবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। অন্যদিকে গাড়ি দুর্ঘটনার পর দিল্লির হয়ে ক্রিকেটে প্রত্যাবর্তন করা রিশভ পন্তও নিজের সামর্থের জানান দিচ্ছেন। এখন দেখার বিষয় কপাল খোলে কার।স্ট্যান্ডবাই: ১৫ জনের স্কোয়াডের বাইরে স্ট্যান্ডবাই তালিকায় একজন খেলোয়াড় রাখতে পারবে দলগুলো। ১৫ জনের স্কোয়াডের কেউ ইনজুরিতে পড়লে কলাপ খুলতে পারে এই তালিকায় থাকা খেলোয়াড়ের। স্ট্যান্ডবাই হিসেবে রিয়ান পারাগ বা খলিল আহমেদকে দেখা যেতে পারে।এর বাইরে ১৫ জনের স্কোয়াডে আলোচনায় আছে চেন্নাইয়ের শিভম দুবে ও কলকাতার রিঙ্কু সিংয়ের নাম। দেখা যাক, তাদের কারো কপাল খোলে কি না।
তাজাখবর২৪.কম: ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১,২০ শাওয়াল ১৪৪৫