প্রকাশ: বুধবার, ৬ মার্চ, ২০২৪, ১২:০০ এএম | অনলাইন সংস্করণ
একাত্তরের অগ্নিঝরা ৬ মার্চ আজ-ফটো- সংগৃহিত
তাজাখবর২৪.কম,ডেস্ক : একাত্তরের অগ্নিঝরা ৬ মার্চ আজ বুধবার। স্বাধীনতা ঠেকাতে রণপ্রস্তুতিতে পাকিস্তানি হানাদাররা। অন্যদিকে যে কোনো আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে অটুট বন্ধনে বীর বাঙালি। সভা, মিছিল, কারফিউ ভঙ্গ, গুলিতে বাঙালি হত্যা- সব মিলিয়ে অগ্নিগর্ভ সময়, বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতি। উনিশশ’ একাত্তর সালের ৬ মার্চেও বঙ্গবন্ধুর ডাকে ছিল হরতাল। সকাল ছ’টা থেকে দুপুর দু’টা পর্যন্ত।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন একাত্তরের এ দিন দুপুরে। তাঁর পুরো ভাষণই ছিল মুক্তিকামী বীর বাঙালিদের উদ্দেশ করে হুমকি ও ধমক। ছিল পাকি সামরিক বাহিনী দিয়ে বাঙালিকে শায়েস্তা করার হুমকি। স্বাধীনতা ঠেকাতে রণপ্রস্তুতিতে পাকিস্তানি হানাদাররা।
‘বাংলার মাটি দুর্জয় ঘাঁটি বুঝে নিক দুর্বৃত্ত’- বেপরোয়া বাঙালি তখন স্বাধীনতার স্বপ্নে যেমন উদ্দীপ্ত; তেমনি ফুঁসছিল বিদ্রোহ, বিক্ষোভ ও ঘৃণায়। পরদিন ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দেবেন বাঙালির মুক্তির দিশারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষণে তিনি কী বলবেন? বহুল আকাক্সিক্ষত স্বাধীনতার ঘোষণা তাঁর বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত হবে কি? এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার অন্ত ছিল না সাড়ে ৭ কোটি বাঙালির মধ্যে। তেমনি দিশেহারা অবস্থা পকিস্তানি হানাদারদেরও।
একাত্তরের পহেলা মার্চ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলার মানুষের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার অর্জনের কর্মসূচি ৭ মার্চ ঘোষণা করা হবে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের একদিন আগে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার হুমকি-ধমকি স্বাধীনতাকামী বাঙালিকে হতাশ, ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত করে তোলে।
এমনিতেই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে লাগাতার হরতাল ও অসহযোগ আন্দোলন চলছে। পাকি প্রেসিডেন্টের ভাষণের পর তা নতুন মাত্রা পায়। ঘর থেকে রাজপথে নেমে আসে বিক্ষুব্ধ হাজার হাজার স্বাধীনতাকামী বাঙালি। সাড়ে সাত কোটি বাঙালির অধীর অপেক্ষা-দৃষ্টি রেসকোর্সের ময়দানে আয়োজিত জনসভার দিকে। সাড়ে সাত কোটি বাঙালির অধীর অপেক্ষা-দৃষ্টি রেসকোর্সের ময়দানে আয়োজিত জনসভার দিকে।
এদিকে অগ্নিগর্ভ মার্চে বাঙালির প্রবল আন্দোলনে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তানি সামরিক জান্তারা। কীভাবে বাঙালির এই আন্দোলন কঠোরভাবে দমন করা যায় সে ব্যাপারে নীল নকশা করতে থাকে সামরিক জান্তা ও তাদের এদেশীয় দোসররা।
বিশ্বের কাছে স্বাধীনতার জন্য বাঙালির এই বাঁধভাঙা আন্দোলন-সংগ্রামের খবর যাতে কোনোভাবেই যেতে না পারে সেজন্য তৎপর হয়ে ওঠে পাকি জেনারেলরা।
শুধু সেন্সরশিপ আরোপই নয়, কোনোভাবেই যাতে বাঙালির আন্দোলন-সংগ্রামের খবর না ছাপা হয় সেজন্য প্রতিটি সংবাদপত্রের অফিসে ফোন বা সশরীরে গিয়ে হুমকি-ধমকিও দেওয়া হয়।
বাঙালি জাতির এমনই আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় শুরু হয়েছিল প্রাণঘাতি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। প্রশিক্ষিত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে পরাস্ত করে বীর বাঙালিরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে এনেছিল মহামূল্যবান স্বাধীনতা। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি তাই নানা কর্মসূচির মাধ্যমে স্মরণ করছে দেশমাতৃকার জন্য আত্মৎসর্গকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের।
বাঙালির জীবনে এবারের মার্চ মাস এসেছে এক অন্য রকম পরিস্থিতিতে। একাত্তরের মতোই স্বাধীনতাবিরোধীদের বিষদাঁত ভেঙে দিতে জেগে উঠেছে দেশের তরুণ প্রজন্ম। শুরু করেছে রাজাকারমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ। দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধেও বিজয়ী হতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তরুণ প্রজন্ম।
তাজাখবর২৪.কম: ঢাকা বুধবার, ০৬ মার্চ ২০২৪, ২২ ফাল্গুন ১৪৩০,২৪ শাবান ১৪৪৫