শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

চাঁপাই সীমান্তে চোরাই পথে আসছে ভারতীয় গরু, রাজস্ব থেকে বঞ্চিত সরকার
প্রকাশ: সোমবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম | অনলাইন সংস্করণ
চাঁপাই সীমান্তে চোরাই পথে আসছে ভারতীয় গরু, রাজস্ব থেকে বঞ্চিত সরকার

চাঁপাই সীমান্তে চোরাই পথে আসছে ভারতীয় গরু, রাজস্ব থেকে বঞ্চিত সরকার

রফিকুল ইসলাম,তাজাখবর২৪.কম,চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হচ্ছে দেশের উত্তর-পশ্চিম জনপদের সিমান্তবর্তী একটি জেলা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত এলাকার বেশ কয়েকটি বিওপি এলাকা দিয়ে চোরাই পথে রাতের অন্ধকারে প্রতিদিন আসছে অবৈধ পথে হাজার হাজার ভারতীয় গরু। আর ঐ সব চোরাই পথে আসা গরু থেকে চোরাচালানিরা লাভবান হলেও সরকার বঞ্চিত হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকার রাজস্ব থেকে। ঐ সব এলাকার বিওপি কেন্দ্রীক ১০/১২ টি করে বর্তমানে সিন্ডিকেট তৈরী হয়েছে ভারতের সীমান্তে অবস্থিত তার কাঁটার বেড়া কাটার। আবার একেক সিন্ডিকেটে ১০/১২ জন করে সদস্য রয়েছে তার বেড়া কাটার জন্য। তারা প্রতিদিন রাত আট থেকে রাত বারটার মধ্যে সময় বুঝে যে কোন সময় সীমান্তে গিয়ে গরু পার করার জন্য তারের বেড়া কেটে রাস্তা তৈরী করে দেয়। তার পর ঐ রাস্তা দিয়ে শুরু হয় চোরাই পথে গরু ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢোকানোর পালা। ঐ সব সিন্ডিকেটের যারা সদস্য তাদের শুধু কাজ তার কেটে রাস্তা তৈরী করার পর ঐ রাস্তা দিয়ে ভিতরে আসা গরু গুলো গণনা করা আর টাকা নেওয়ার পালা শুধু সিন্ডিকেট নেতাদের কাজ। তারা প্রতি জোড়া গরু তিন হাজার পাঁচশত টাকা করে নিয়ে দেশের ভিতরে ঢোকাচ্ছে। আর এই ভাবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউপির মাসুদপুর ও সিংনগর সীমান্তের দুটি মাত্র বিওপির এলাকা দিয়ে বর্তমানে প্রতিরাতে ৩/৪ হাজার গরু চোরাই পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। আর এই ভাবে ঐ এলাকার অনেকেই এখন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। আর এই সব কাজের সিন্ডিকেট নেতাদের যে কোন প্রশাসনিক আপদে বিপদে এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদেরকে সুপারিশ করে আগলে রাখেন। এমনকি উপজেলা বা জেলা সদরের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক নামধারী লোকজনকেও ঐ সব প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা হাত করে রেখেছেন। যেন উপজেলা বা জেলা সদর থেকে কোন সাংবাদিক ঐ সব এলাকায় তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে তারা যেন আগে ভাগেই সেই খবরটা পেয়ে যান। আর এই ভাবেই প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও দু-একজন সাংবাদিক নামধারী লোককে হাত করেই তারা দিনের পর দিন সীমান্তের তার বেড়ার তার কেটে অবৈধ পথে সরকারের রাজস্ব বিভাগকে ফাঁকি দিয়ে ভারতীয় গরু বাংলাদেশে ঢোকাচ্ছে। আর এই ভাবেই তারা তাদের এই অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এবং এদের মধ্যে অনেকেই বর্তমানে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন।  ঐ এলাকায় প্রথমে দু/তিনজন মিলে গ্র“প তৈরী করে ব্যবসা শুরু করতে হয়।
এলাকায় সরেজমিন গেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন গরু ব্যবসায়ী ও অর্ধশতাধীক ব্যক্তি জানান, আমাদের এলাকায় দুটি মাত্র বিওপি রয়েছে । একটি হচ্ছে, সিংনগর বিওপি ও আরেকটি হচ্ছে মাসুদপুর বিওপি। আর এই দুই বিওপির সীমান্ত এলাকা দিয়ে যারা গরু পাচারের কাজ করে তারা দুই/তিনজন মিলে একটি গ্র“প তৈরী করে। তারপর সেই গ্র“পে আবার ১০/১২ জন করে দিনমজুরের মত প্রতিরাতে লোক নেওয়া হয়। তাদের কাজ হলো তার কাটা ও গরু গণনা করা। আর টাকা নেওয়ার কাজ হচ্ছে গ্র“প প্রধানের। আর এই ধরণের গ্রুপ দুই বিওপি এলাকায় কম করেও ২০/২২ টি রয়েছে। তারা আরো বলেন সীমান্ত এলাকার যে কোন চোরাকারবারীর সাথে কোন না কোন পুলিশ ও বিজিবির কিছু অসাধূ সদস্য পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত থাকার কারনেই তারা তাদের ব্যবসা করতে পারছে।
যারা গ্রুপ তৈরী করে তার কেটে মাসুদপুর বিওপির সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ ভাবে গরু পার করছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ঐ এলাকার ডাকনীপাড়ার আইজুল মেকারের দুই ছেলে সফিকুল ও বাবু, আবু মাষ্টারের ছেলে হাফি, ঠুঠাপাড়ার ইয়াসিন মেম্বারের ছেলে বাসেদ, ঠুঠাপাড়া-হঠাৎ পাড়ার হাসেনের ছেলে কাইয়ুম, সাহাপাড়ার সামশুলের ছেলে সাব্বির, তারাপুরের ভাদুর ছেলে জিয়াউর, আহবানের ছেলে কবির, জামালের ছেলে মিষ্টার ও মোতাহার, সোহরাবের ছেলে জাহাঙ্গীর, ইসমাঈলের ছেলে দুরুল, হান্নানের ছেলে সামিম, তারাপুর মিস্ত্রীপাড়ার বদিউরের ছেলে গাজি ও সিংনগর বিওপির সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবৈধ ভাবে গরু পার করছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সিংনগর গ্রামের মোজাফ্ফরের ছেলে বাসির, সালামের ছেলে সেন্টু, জীবনের ছেলে নাজিম ও এম, নাসারুর দুই ছেলে রশিদ ও সফিকুল,মোন্নাপাড়ার তাজেমুলের ছেলে রহিম, নুহুর ছেলে মানারুল, লতিবের ছেলে সেরাজুল, ইসু মোন্নার ছেলে আবু তাহের, ফজলু মুন্সির ছেলে আকালু কেরানি। মুন্জুরের ছেলে কানসার, মোড়ল পাড়ার মোস্তফার ছেলে রকিব ও তার ছেলে বাবু, তারাপুরের সোহরাবের ছেলে জামাল ও এসলামের ছেলে হামিদ। এরা প্রত্যেকেই হচ্ছে সিন্ডিকেট প্রধান বা তাদের ভাষায় গ্রুপ লিডার। এ ব্যাপারে কয়েকজন সিন্ডিকেট নেতাদের সাথে কথা বললে তারা প্রথমে বিষয়টি অস্বিকার করার চেষ্টা করেন। পরে একেকজন একেক রকম কথা বলতে বলতে তারা বলেন, আমরাতো দেশের কোন জিনিস ক্ষতি করি না। তাহলে আপনারা কেন এ সব লেখালেখি করার চেষ্টা করছেন।
উল্লেখ্য, বৃহ্সপতিবার (১৮ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউপির সিংনগর সীমান্তে চোরাইপথে তার কেটে গরু আনার সময় ভারতীয় বিএস্এফ) সিংনগর বিওপির অধীনস্ত ৫/১এস পিলার এলাকার হারুনের বাগান নামক জায়গায় উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নাধীন সাহাপাড়া সিংনগর পন্ডিতপাড়া গ্রামের মর্তৃজা মাস্টারের ছেলে যজম আলি(৩০) কে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আহত ব্যক্তি হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নাধীন সাহাপাড়া সিংনগর পন্ডিতপাড়া গ্রামের মর্তূজা মাস্টারের ছেলে যজম আলি(৩০) সে বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে সিংনগর বিওপির হাবিলদার দেলওয়ার হোসেন জানান শুক্রবার রাত সাড়ে ৪টার দিকে যজম আলি(৩০) সিংনগর বিওপির অধীনস্ত ৫/১এস পিলার এলাকা দিয়ে চোরাইপথে গরু আনার পথে ভারতের শোভাপুর ক্যাম্পের বিএসএফ টের পেয়ে যজম আলিকে ধরে বেধড়ক পিটিয়ে গুরুতর আহত করে ফেলে চলে যায়। তারা সংবাদ পেয়ে যজম আলিকে উদ্ধার করে তাদের আত্মীয়দের সহযোগিতায় চিকিৎসার জন্য  রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।  তিনি আরো জানান যজম আলিকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগটি ভারতের শোভাপুর ক্যাম্পের বিএস এফ অস্বীকার করেছে। সংশ্লিষ্ট মনাকষা ইউপির ৯নং ওয়ার্ড সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিল জানান, যজম আলিকে বিএসএফ পিটিয়ে কিছুটা আহত করেছে। তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেযা হয়েছে। এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৯ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে: কর্ণেল এস এম আবুল এহেশান বলেন আহত ছেলেটির সাথে কথা বলে বিএসএফের সাথে বৈঠক করলে তারা ঘটনাটি অস্বীকার করেছেন।
 à¦‰à¦²à§à¦²à§‡à¦–্য, গত ১৭ জনুয়ারী গভীর রাতে চৌকা বিওপির অধীনস্ত সীমান্ত এলাকায় চোরাইপথে গরু আনার সময় মনাকষা ইউনিয়নাধীন পারচৌকা রাঘববাটি গ্রামের মৃত আবু হোসনের ছেলে বিকোল আলি(৩০)কে ভারতীয় বিএসএফ সদস্যরা রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে গুরতর আহত হয়। সে তিনদিন যাবত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

তাজাখবর২৪.কম: ঢাকা সোমবার ২২ জানুয়ারি ২০১৮, ৯ মাঘ ১৪২৪

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »






সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সম্পাদক: কায়সার হাসান
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আর কে ফারুকী নজরুল, সহকারি সম্পাদক: জহির হাসান,নগর সম্পাদক: তাজুল ইসলাম।
ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: মডার্ণ ম্যানশন (১৫ তলা) ৫৩ মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০।
ফোন: ০৮৮-০২-৫৭১৬০৭২০, মোবাইল: ০১৮১৮১২০৯০৮, ই-মেইল: [email protected], [email protected]
সম্পাদক: কায়সার হাসান
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আর কে ফারুকী নজরুল, সহকারি সম্পাদক: জহির হাসান,নগর সম্পাদক: তাজুল ইসলাম।
ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: মডার্ণ ম্যানশন (১৫ তলা) ৫৩ মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০।
🔝