শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪

নড়াইলে অনুমোদন বিহীন ইট ভাটায় কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশ নষ্ট করা হচ্ছে
প্রকাশ: সোমবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম | অনলাইন সংস্করণ
নড়াইলে অনুমোদন বিহীন ইট ভাটা

নড়াইলে অনুমোদন বিহীন ইট ভাটা

হুমায়ুন কবীর রিন্টু ,তাজাখবর২৪.কম, নড়াইল:  নড়াইলে অনুমোদন বিহীন ইটভাটায় দেদারছে কাঠ পুড়োনো হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ। অভিযোগ রয়েছে এসব ভাটা হতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে মাসোহারা দিয়ে ম্যানেজ করা হয়ে থাকে। ইট পোড়ানো মৌসুমের শুরুতে ওইসব ভাটা হতে যথা নিয়মে নির্ধারিত হারে টাকা পৌছে দেয়া হয় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের হাতে। এরপর নিশ্চিন্তে চলে এসব অবৈধ ভাটার কার্যক্রম। ঠিকমত টাকা না দিলে সে ভাটায় চালানো হয় অভিযান। ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে শাসিয়ে আসা হয় ওই ভাটা মালিককে। হুমকি দেয়া হয় ভাটা বন্ধ করে দেয়ার। এরপরও কেউ সৌজন্য সাক্ষাৎ না করলে তথা নজরানা না দিলে তাকে ধমকানো হয়। কিন্তু ভাটা বন্ধ করে দেয়ার মত কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া হয় না। এভাবেই দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে অবৈধ ভাটার ব্যবসা। কারণ ওইসব ভাটা হতে মোটা অংকের টাকা পায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীরা এমনই অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন ভাটা এলাকার বাসিন্দারা। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। অনুমোদন বিহীন ভাটা মালিকরা চেষ্টা করেও বর্তমান জেলা প্রশাসকের কাছে ভিড়তে পারছেন না। তটস্থ রয়েছেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সেসব কর্মচারীরা, যারা ওইসব ভাটা হতে সুবিধা নেন। সাহস করে কেউ জেলা প্রশাসকের নিকট বিষয়টি উপস্থাপন করতে পারছেন না বলে জানান একাধিক ব্যারেল চিমনি ভাটা মালিক। জেলা প্রশাসক কঠোর অবস্থানে থাকায় তারা দুশ্চিন্তায় আছেন বলেও জানান একাধিক ভাটা মালিক। জেলায় প্রায় ৬০টি ইট ভাটা রয়েছে। তবে জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্য সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৪৬টি ইট ভাটা রয়েছে। এর মধ্যে সদরে ১০টি, লোহাগড়ায় ১৯টি এবং কালিয়ায় ১৭টি ইট ভাটা রয়েছে। এসব ভাটার মধ্যে মাত্র ১৩ টি জিকজ্যাক ভাটা, ১০টি ফিক্সড চিমনি এবং টিন বা ব্যারেল চিমনি ভাটা ২৩টি। জেলার ৪৬টি ভাটার মধ্যে প্রায় অর্ধেক ভাটার কোন লাইসেন্স নাই। যারা লাইসেন্স করেছেন। তাদের মধ্যে অনেকের লাইসেন্স নবায়ন নেই। অধিকাংশেরই পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন ছাড়পত্র নাই। অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দীর্ঘকাল ধরে চলে আসছে এসব অবৈধ ভাটা। অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার ভাটা মলিকদের একটি সমিতি থাকলেও তা এখন নড়বড়ে অবস্থা। অবৈধ ভাটার পরিমান বেশি হওয়ায় এমন পরিস্থিতি হয়েছে। অবৈধ ভাটা মালিকদেরই দাপট বেশি। এক সময় ফিক্সড চিমনি ভাটার বৈধতা থাকলেও ২০১৩ সালের দিকে এ ভাটা নিষিদ্ধ করা হয়। সে হিসেবে শুধুমাত্র জিকজ্যাক ভাটা বৈধ। জেলায় এ ধরনের ভাটা মাত্র  ১৩টি। বাকি ৩৩ টি ভাটা চলছে বে-আইনীভাবে। প্রতি বছর ইট পুড়ানো মৌসুমে অবৈধ ভাটা মালিকদের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের একটি অলিখিত চুক্তি হয়। সেই চুক্তি মোতাবেক অবৈধ ভাটা গুলি বীরদর্পে পরিবেশ বিধ্বংসি চিমনি ভাটায় ইট পোড়ায়। আর সেখানে প্রকাশ্যে পোড়ানো হয় কাঠ। টিন ও ড্রাম কেটে বানানো এসব ড্রাম বা ব্যারেল চিমনি ভাটার অধিকাংশই গড়ে উঠেছে ফসলি জমিতে। ব্যারেল চিমনীর কিছু ভাটা স্থাপন করা হয়েছে ঘন বসতি এলাকায়। আইনের প্রতি নেই কোন তোয়াক্কা। সরজমিন গিয়ে দেখা যায়, নড়াইল সদর উপজেলার চৌগাছা এলাকার সুমন চৌগাছা বাজারের পাশে একটি ভাটা পরিচালনা করছেন। এ ভাটায় আহাদ এবং এমএবি এই দু’নামে ইট কাটা হচ্ছে। এ ভাটাটি টিনের তৈরী চিমনী ভাটা। সুমনের ভাই লিটন আগে এ ভাটাটি পরিচালনা করতেন। বর্তমানে সুমন পরিচালনা করছেন। সেখানে কিছু শিশু শ্রমিক কাজ করছে। এ ভাটায় কর্মরত শ্রমিকেরা জানান, প্রতি মৌসুমে জেলা প্রশাসকের এলআর ফান্ডে টাকা দিলেই ভাটা চলানোর অনুমতি মেলে। আর সেই সাথে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দু’একজন অসাধু কর্মকর্তা কে কিছু নজরানা দিতে হয়। এভাবেই এ ভাটা চলে। একই ভাবে চলছে চন্ডিবরপুর ইউনিয়নের নাওরা এলাকার মহব্বতের ভাটা। প্রশাসনের চাহিদা পূরন না করায় গত মৌসুমে সদরের বালিয়াডাঙ্গার ওমর শেখ এর মেসার্স এমএসবি ব্রিকস-এ দফায় দফায় মোবাইল কোর্ট চালিয়ে ভাটা মালিককে সর্বশান্ত করা হয়। অথচ অন্য অপরাধিদের নিকট হতে নগদ নারায়নে তুষ্ট হয়ে তাদেরকে কিছুই বলা হয়নি। দু’এক জায়গায় নামকা ওয়াস্তে লোক দেখানো মোবাইল কোর্ট চালানো হয়েছিল। লোহাগড়ার শিয়রবরের আবুল হাসান মোল্যার মোসার্স হীরা ব্রিকস এর চিমনি ভাটায় পোড়ানো হয় কাঠ। তার মত এ উপজেলার লাহুড়িয়ার খোকন শেখ খোকন ব্রিকসে,ইদ্রিস জমাদ্দার মেসার্স এমজেবি ব্রিকসে, মিঠাপুরের আব্দুর রহমান মেসার্স সাহাদ ব্রিকস-এ টিনের তৈরী চিমনী ভাটায় দেদারছে কাঠ পুড়িয়ে আসছেন। তাদের মত এ উপজেলার অন্যান্য ব্যারেল চিমনীর ভাটা মালিকরা প্রকাশ্যে কাঠ পুড়িয়ে পরিবেশ নষ্ট করছেন। একইভাবে কালিয়া উপজেলার বাগুডাঙ্গার শাজাহান মেসার্স মদিনা ব্রিকসে, কাঞ্চনপুরের ময়না খানম মেসার্স আল আরাফাত ব্রিকসে, খুরশীদ আলম মেসার্স এসবিএম ব্রিকসে ব্যারেল চিমনী ভাটায় কাঠ পুড়িয়ে আসছেন। তাদের মত বড়নালের মনিরুল,ধুসহাটির মোরতজা,বারইপাড়ার তুলসী সাহা সহ অন্যান্য চিমনী ভাটা মালিকরা ধুমছে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরী করে আসছেন। এ বছরও জেলার তিন উপজেলার অধিকাংশ অনুমোদন বিহীন ভাটায় ইট পোড়ানোর প্রস্তুতি চলছে। কেউবা ইট কেটে জড়ো করছেন। কেউবা আগুন দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের সকলেই ভাটা এলাকায় কাঠ এনে জড়ো করেছেন। মৌসুমের শুরুতেই এসব ভাটা মালিকরা প্রশাসনের সাথে দেন দরবার করেন। প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের চাহিদা মত টাকা দিয়ে এবং এলআর ফান্ডের দাবি পূরণ করে কাঠ দিয়ে ইট পুড়ান। তবে এবার কিছুটা বিপত্তি ঘটেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাটা মালিক জানান। নতুন জেলা প্রশাসক আসায় তারা দুশ্চিন্তায় আছেন। মৌসুম শুরু হলেও তারা এখনও জেলা প্রশাসন হতে কোন সিগনাল পাননি বলে জানান। এ কারনে কোন কোন ভাটা মালিক ধীর গতিতে কাজ চালাচ্ছেন। কেউবা ঝুকি নিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসন হতে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে কয়েকটি ভাটায় জরিমানা করা সহ কঠিন হুশিয়ারী দিয়েছেন। এতে কেউ কেউ ভীত সন্ত্রস্ত হয়েছেন। আবার কেউ কেউ দূর্বার গতিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা আশা করছেন প্রশাসন যতই কঠোর হোক, অচিরেই জেলা প্রশাসনের সাথে একটা আপোষ রফা হবে। চৌগাছার সুমনের ভাটার এক কর্মচারী জানান, প্রতি বছরই এভাবে প্রশাসন হম্বিতম্বি করে। টাকা পয়সা দিলে সব ঠিক হয়ে যায়। সে কারনেই ইট কাটার কাজ বন্ধ করা হয়নি। এবার হয়তো বেশি টাকা লাগতে পারে বলে তিনি আশংকা করেন। ওই কর্মচারী আরোও জানান, ভাটা চালাতে সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতা সহ বিভিন্ন জায়গায় টাকা দিতে হয়।
নড়াইল সদরের এক ভাটা মালিক জানান, প্রশাসনের উৎসাহ অনুপ্রেরনায় অনুমোদন বিহীন ভাটাগুলি সৃষ্টি হয়েছে। এসব অবৈধ ভাটার মদদ দাতা প্রশাসন। ওইসব ভাটা মালিকরা বেশি টাকা দেয়। সে কারনে তাদের প্রতি প্রশাসনের দরদ অনেক বেশি। নানা অজুহাতে ওই ভাটাগুলি চালিয়ে যেতে প্রশাসন সহযোগিতা করে যাচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের নাম ব্যবহার করে বলেন, অমুক সাহেবের রিকুয়েস্টের কারণে ওই ভাটার বিরূদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না। তবে নগদ অর্থ পেয়েও অনেক সময় দু’একজন ঘুষখোর রাজনৈতীক নেতা সুপারিশ করে থাকেন। অনুসন্ধানে আরোও জানা যায়, অবৈধ ভাটা গুলি চালু থাকায় বেশি অর্থ বিনিয়োগ করেও লাভবান হতে পারছেন না বৈধ ভাটা মালিকরা। এদিকে পরিবশে বিধ্বংসি এসব ভাটার কারনে ভাটা এলাকার জনস্বাস্থ্য দিন দিন চরম হুমকির দিকে যাচ্ছে। জেলা প্রশাসক মোঃ এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন,কোন অবস্থাতেই অনুমোদন বিহীন ভাটা চলতে দেয়া হবে না। জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ওইসব ভাটায় অভিযান চালানো হচ্ছে। মোবাইল কোর্ট করে অনুমোদন বিহীন বিভিন্ন ভাটায় জরিমানা করা হয়েছে। এমনকি জেল দেয়া হয়েছে। মোবাইল কোর্ট অব্যহত থাকবে। সচতেন মহল এসব অবৈধ ভাটা বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।


তাজাখবর২৪.কম: ঢাকা সোমবার ০৪ ডিসেম্বর ২০১৭, ২০ অগ্রাহায়ণ ১৪২৪

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »






সর্বশেষ সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ

সম্পাদক: কায়সার হাসান
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আর কে ফারুকী নজরুল, সহকারি সম্পাদক: জহির হাসান,নগর সম্পাদক: তাজুল ইসলাম।
ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: মডার্ণ ম্যানশন (১৫ তলা) ৫৩ মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০।
ফোন: ০৮৮-০২-৫৭১৬০৭২০, মোবাইল: ০১৮১৮১২০৯০৮, ই-মেইল: [email protected], [email protected]
সম্পাদক: কায়সার হাসান
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আর কে ফারুকী নজরুল, সহকারি সম্পাদক: জহির হাসান,নগর সম্পাদক: তাজুল ইসলাম।
ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: মডার্ণ ম্যানশন (১৫ তলা) ৫৩ মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০।
🔝